উৎপল কুমার বসু
বিস্মরণ ভুলে যাই নিজের ঠিকানা। ছোট একটা বাড়ি ছিল। কিছু দূরে নীলকুঠি। গুটিকয়েক তালগাছ আর কিছু লতাপাতা জড়িয়ে আমার স্থাপত্যের দক্ষিণী ঘোষণা। ছিল হাঁস। ভূগোলের পাঠ্যবই থেকে নেমে আসা উট ও বিদেশী গাধার দলে আমি একা ক্রীতদাস। আপাতত স্থলপদ্মের বনে ঘুমিয়ে রয়েছি। সুবোধ দাস
২১শে ফেব্রুয়ারি লিখলাম বাবা লিখলাম মা লিখলাম মেয়ে লিখলাম ছেলে লিখলাম প্রিয় বন্ধুরা লিখলাম করপুট লিখলাম অঞ্জলি লিখলাম ভাষামাতা লিখলাম পদ্যশোভিত লিখলাম পদ্মশোভিত বাংলার পা... বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়
ভাষা, শোনো... একটি দেশের পাশে শুয়ে ছিল ভাষা সমুদ্র অনতিদূর, জাহাজের ডেকে বসা কেউ কেউ ভেবেছিল আরও এক নতুন তামাশা ভোর হল - হালকা গুলির শব্দ, কয়েকটি বক মানুষের বালবাচ্চা, হাঁস-মুরগি, তাদের শাবক মরে গেল, বডি নিয়ে গাড়ি ও পুলিশ চলে গেল, প্রশাসন টিভিতেই দিলেন ধমক! স্বাভাবিক রাত্রি হল, মৃদুস্বরে দেশ ডাকল - ভাষা শোনো তোমাকে না বাঁচাতে পারিনি অক্ষরের কাছে আমি চিরদিন ঋণী থেকে যাব, ভাষা চুপ, অদূরে জলের শব্দ উত্তর দিল না কেউ কোনও একটি নদীর পাশে দেশ কিনারে কবর, তার নির্লিপ্ত ছায়ায় রক্তাক্ত ভাষার খুব কাছ দিয়ে একটি-দুটি দন্তহীন বিষধর সাপ চলে যায় জল ও কাদার দিকে, উজ্জ্বল খোলসগুলি চকচক করে ওঠে, শেষরাতে, জোয়ারের আগে... চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
উদযাপন কাম অন ডার্লিং, সরদার ফারুক
অবিশ্বাসী একবার শুধু তাকে ‘অবিশ্বাসী’ বলো বলো ‘মুরতাদ’ তারপর কণ্ঠ চেপে ধরো সে যেন ধর্ষক, সদোম ও গোমরাহ্ নগরের সমকামী পাপী সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে মানুষের মতো অবয়ব ! এই লোক কবিতা লিখত গানে সুর দিয়ে সারাদিন প্ররোচনা দিত দেশকে মা বলে ডাকে - এমন জাহেল টান দিয়ে জিভ ছিঁড়ে নাও! হিন্দোল ভট্টাচার্য
রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায় মেঘ অদিতি
রাতজাগা চোখ যারা আজকে নবীন তারা ভাঙছে আগল তুলে উচ্চে শ্লোগান মুঠো বজ্রকঠিন বুকে রাখছে আগুন মুখে তুলছে যে গান বুকে ছুটছে তুফান দেখি আসছে জোয়ার
দোলনচাঁপা চক্রবর্তী
দৃষ্টিবিভ্রম -৩৩ বারোয়ারি শীত এল জানলায় গোপন আর সংযম মিলেমিশে কিছুটা হচ্ছে কিছু হচ্ছে না তার মেলামেশা যানজটে আটকে এখনও স্লোগান মিছিলে তিন মিনিটের নীরবতা ফুলের মূহুর্ত এইসবই ঝরে গিয়েও একা হলনা হলুদ ফাগুনের দিন আমাকেও ধারণ করলে নিজের ভিতর প্রতিবাদী গৃহস্থের রক্তকথা দিয়ে কচি রেজা দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় মারুত কাশ্যপ
ভাষা আছে তোমাকে বলার আমারও তো ভাষা আছে তোমাকে বলার সাহস ভালবাসবার, অক্ষর শব্দের পথে পথে- ফুল ফুটুক সেদিনও বসন্তের রঙিন পলাশ- গান আর থামবে না গাও হে দরাজ ভাটিয়ালি কথকঠাকুর দু’কলি ‘মঙ্গল’ হোক আরবার বাংলার মাটি জল হাওয়া থেকে তুলি সুর গাথা যত নকশিকাঁথার- ভাষা তো আমারও আছে তোমাকে বলার হে নদীমাতৃক- রমিত দে নায়েম লিটু
বাঙালি, বাঙালি সন্ধ্যায় প্রদীপ হাতে আমরা দাঁড়াই রাস্তার পাশে সারি বেঁধে হাতে হাত রেখে, একে অপরকে চিনি বা না চিনি পাশাপাশি চলছিল স্বতস্ফূর্ত স্লোগান— ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার, তুমি কে আমি কে? বাঙালি বাঙালি, ফাঁসি ফাঁসি রাজাকারের ফাঁসি...’ কেউ কেউ আবেগে কেঁদেই ফেলছিল যেন ফিরে এসেছে ১৯৭১ ফিরে এসেছে ১৯৫২... আজ এই আলোর মিছিল, প্রদীপশিখার এই বৃত্ত— সবার হৃদয়ে আজ একটাই, সুর একটাই গান বাঙালি বাঙালি... শাহবাগ, বাঙালিকে আবার জাগালো বাঙালির হার না মানা বীরত্বগাথায়... রঙ্গীত মিত্র
আমার রন্ধ্রে লেখা আছে ২১ তারিখ বন্ধের নির্জন অবসরে একটি মেরুন জিন্স পরা একটি মেয়েকে সাইকেল নিয়ে হেঁটে যেতে দেখলাম...যদিও শীতকাল তার জিন্সের পকেটে...তার পকেটের থেকে নেশার দল তার মাথা বার করে আছে...আর ওদিকে ঘিয়ে জামা পরে যিনি ছিলেন তার পাশ দিয়ে চোখ বন্ধ করা অন্ধকার বলে দেয় সময় এগিয়ে যাচ্ছে আর আমি তাও আর একটু এগিয়ে দেখছি ক্লান্ত পুলিশের চোখ বেকার চায়ের দোকান থেকে চা কিনে আকাশে না ঘষছে আর ওই তো ওদের আজ ছুটির দিন...এখন অনেক প্রেম করা যাবে; কোল্ড ড্রিংস ফেলে দিয়ে মদ মিশিয়ে দিচ্ছে মনে ভিতর...আর আমি সেই দিকে তাকিয়ে সমানাধিকারের কথা বলি,ওপেন সোসাইটির কথা বলি এখানে তোমার স্তনের উপর ২১ তারিখ লেখা আছে লেখা আছে আমাদের যাযাবর সম্পর্ক যাপনের ভ্রমণ চিত্র। শ্রেয়া ঠাকুর ফারহানা আনন্দময়ী স্ফুলিঙ্গ ২০১৩ মেসবা আলম অর্ঘ্য
শাহবাগ ফুটপাথ একটা পদ্মফুল কী স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি! একটা নারিকেল ছোবড়া! আমি ধূলার ভিতর চক্রাকার, ধূলার মধ্যে প্রেমের কথা বলল মানুষ অনেক কঠিন প্রেমের কথা, বোঝাই যায় না! এখন শাহবাগের ছবি দেখে মনে পড়ল সেইদিনও চাদর- শাহবাগ ফুটপাথ জড়াচ্ছিলাম বুকের উপর তেরছা করে দুইদিকে দুই স্বাস্থ্যকেন্দ্র মধ্যিখানে প্রেম কার সাধ্য বোঝে! এখন সবকিছু বদলে গেছে পদ্ম আর নারিকেল মিলেমিশে গেছে আমি বরফের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টেলিফোনে শুনতে পেলাম প্রশান্ত সরকার
উৎসব ছিল মননে আর উৎসব, ছিল এখানেই তবু সংগ্রাম, গণজাগরণ দেশ জাগছে, যত রাজাকার এই একুশে, শুধু জনগণ আজ উৎসব ছিল তবুও এক লক্ষের সুরে বাজছে তোর ফাঁসি চাই, তোর ফাঁসি হোক এই শহীদ মিনার সাক্ষী যত জামাতের দল হুঁশিয়ার আজ উৎসব ভাষা-দিবসে তবু ডাকছি, তবু ডাকব লাল তরুণরা সব শাহবাগে এসে পতাকা তুলে ধরছে আজ বাংলা ভাষার দুর্দিন আজ উৎসব দেশ-বিদেশে যত রক্ত, তত হুংকার তবু মিছিলে, নেই কান্না কিছু স্লোগান ভাঙছে স্লোগানে আর হাতে হাত ধরা আমাদের আজ উৎসব তবু চলছে হবে বিপ্লব, দেশ জাগছে সেই ঘুরে ফিরে ফের একুশে আরও মরতেও আছি প্রস্তুত রোজ বাংলা ভাষার জন্যে আজ উৎসব জারি বক্ষেই আছে সন্ত্রাস, তবু নির্ভীক এই গোষ্ঠীই, শুধু অস্ত্র ঠিক চালিয়েই যাব সংগ্রাম আছে উৎসব, থাক মননে আছে বাংলা, জেগে বাংলায় সোনালী রাজলক্ষী রায়
শাহবাগ ‘১৩ : যারা ৪০ বছর ঘুমোয়নি এ কবিতা লেখার সময় না এখন হাতেপায়ে হামাগুড়ি দিয়ে মিছিলে যাবার সুসময় এখন বেদনাকে ব্যাকবার্নারে রেখে কৈফিয়ত চাইবার আনম্র সময় এখন এক থালায় রক্তভাত খাবার সময় এখন নিভন্ত চুল্লীর আগুন নেড়ে দেবার বারুদ সময় এখন বিধবা নারীকে সধবা করার বন্ধ্বু সময় এখন খুনীদের চোখে চোখ রাখার বিষাক্ত তীর সময় এখন অর্জুন হবার উদ্ধ্বত সময় এখন চাবি খুঁজবার সাক্ষী সময় এখন পরিত্রাণের সম্ভব সময় এখন ছালচামড়া উপড়ানোর সার্থক সময় এখন ঘরে ঘরে আনাচে কানাচে শাহবাগ সময় সুস্মিতা চক্রবর্তী
ফিরে এল ইতিহাস! ফিরে এল জয় বাংলা- ফিরে এল পুরনো স্লোগান। ফিরে এল ইতিহাস- গণদাবি তোমার আমার। যে জ্বালা হৃদয়ে আছে- শাহবাগও একই ক্রোধে জ্বলে! নতুনের ডাক শুনি- সারা দেশে ‘শাহবাগ’ মানুষের মিছিলে মিছিলে। |
আসাদ মান্নান
প্রজন্ম তোমার জন্য প্রজন্ম তোমার বুকে শাহবাগে এ কেমন আগুন জ্বালালে! সারা বাংলাদেশ আজ যেন শাহবাগ; গ্রামে গঞ্জে সব কন্ঠে এক আওয়াজ এক দাবি ফাঁসি চাই,ফাঁসি- কাদের মোল্লার ফাঁসি; ফাঁসি হোক সকল খুনির। পুষ্পের দোকানে আজ অগ্নি জ্বলে ফুলের খোঁপায়; নিদ্রাতুরা রাজপথ জেগে ওঠে মাঘের নিশীথে। যদিও গণ্ডার আমি পড়ে আছি ঘুমাচ্ছন্ন খাটে চামড়ার ভেতরে তবু জেগে আছি মৌলিক মানুষ, মানব-দানব যুদ্ধে যে মানুষ পরাজিত নয়; আমাকে প্রজন্ম তুমি সঙ্গে পাবে তারুণ্যের হাটে। এতটা আগুন আমি বহুদিন কোথাও দেখি নি: এ আগুনে জ্বলে পুড়ে শুদ্ধ হোক মাটি ও মানুষ। এ আগুন একবার জ্বলেছিল জনকের ডাকে গৌরবের রক্তঝরা অবিনাশী দীপ্ত একাত্তরে; আবার জ্বালালে তুমি তোমাকেই হাজার সালাম- আমার সকল প্রেম অহংকার তোমাকে দিলাম। গৌতম চৌধুরী
বসন্ত, ১৪১৯ তর্ক ।। তোমাকে বিশ্বাস ক’রে বারবার ভিজেছে পাতলুন সমরজিৎ সিংহ
মাতৃকথা জন্মসূত্রে, আমার দুই মা। পিতার বিবাহসূত্র উল্লেখ করিলে ভুল হইত না। বহমান রাজরক্ত পিতার। আমার স্বপ্নে পেটিকারা, হিউয়েনসাঙ, বৌদ্ধতরবারি, পিতামহদের অবৈধ প্রণয়। পিতৃসূত্রে দুই মা আমার। যদি রাজপাট থাকিত, আমার মা ছিলেন দুয়োরাণী। রূপকথার ঐ চাদর সরিয়ে, আজও দেখি, আমার দুই মা। একুশ, সে সুয়োরাণী। আর দুয়ো ঊনিশের ঘরে আমার যৌবন। সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
শিশু যদি তুমি দীর্ঘ হ'তে দীর্ঘ হ'তে, দীপ্র বালুচর, এই দ্বিপ্রহর যত তেতে উঠতে পারে যদি হ'ত তত তপ্ত আমাদের রক্তের লবণ! অভীপ্সার টি-জংশনে আমাদের মন ট্র্যাফিক লাইটের দিকে তাকানো, হলুদ হলুদই, কখন হবে সবুজ বা লাল? আমরা কি সঙ্ঘর্ষে যাব? আমরা কি একবার চ্যালেঞ্জ নিয়েই ফেলব, রুগ্ন বালুচর? আমরা কি রাতের গালে তারা হ'য়ে যাব? ফলের মতন ফোলা আমাদের মন বোমার মতন ভোমা পাপী অপেক্ষায়... আমরা আমাদের দেখব, ভাঙব পরস্পর। রায়হান রাইন
আমাদের স্মৃতিতে অতগুলো নাম আমাদের স্মৃতিতে অতগুলো নাম মনে রাখার জায়গা নেই, এখন তারা কেবলই একটা সংখ্যা, অবিভাজ্য পূর্ণ সংখ্যা জুয়েল মাজহার রাকা দাশগুপ্ত
প্রজন্ম-কে একুশ দিন-ভর চলুক ঝড় আর একুশ মাস-তক প্রলয়সংকেত শহরময় আজ কে গর্জায়? দ্যাখ, কে দরজায় আজ এমন দুর্বার ? ডুবুক বন্যায় ভুবনগ্রাম, আর কাঁপুক মসনদ, গোপন বিষ-খেত শবের পর শব চালান হয় তাও কোথায় ফুরসত আগুন ছুঁড়বার? এরাও দেশ-কাল, এরাও উদ্ধার। এরাই ব্লগ-জোন, এরাই ফেসবুক। এরাই ঋণ আর এরাই তমসুক। আমার দ্যুতি নেই। তোমরা ভাস্বর । আমার জানলার বাইরে বয়ে যাও প্রজন্মের থেকে প্রজন্মান্তর... অনুপম মুখোপাধ্যায়
আ মরি... লোডশেডিং তো উত্তম কুমার নয় হিজল জোবায়ের
জলডুবুরি ফুল... পাথর ভাঙলে রক্ত শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী
ভাষা আর এই স্বপ্নের পর আমি ফের নেমে আসি বিশতলা দৃশ্য পেরিয়ে দ্রুততম। নেমে আসা বাতাস-নির্ভর। কালো মানুষের গান এবার আমার কথা বলো, এ'শহর তোমার ত্বকের মতো গাঢ় হয়ে এসেছে এখন... আমার ভালোবাসার চিরকেলে ঈষৎ দ্রবণ কেলাসিত হতে হতে যুবকেরা একা হাঁটে, চালকেরা এ'সময় পাড়ি দেয় দূরপাল্লায়। ট্রাকের জানলা থেকে ধোঁয়া ছাড়ে তারই মতো পাতা যত পোড়ে ঠোঁটে, সিলেবলে ভেঙে যায় ছাই– এহেন জানলাগুলি নিছক সরণ বোঝে, প্রতিবিম্বরা সরে যায় চালক দূরত্ব বোঝে, দূরে দেখে পান্থপাদপ– আর এই স্বপ্নের পর আমি ফের নেমে আসি বিশতলা দৃশ্য পেরিয়ে, নেমে আসা বাতাস-নির্ভর। কালো মানুষের গান এবার আমাকে বলো, যুবক ধূমপান বোঝে...অন্তর্দহন বোঝেনা...? ভাষা ২ তোমাকে দিই এখনও খুব ভালোবাসার চিঠি, আঙুলে নীল পুরোনো দাগ কালশিটের রেখে ছোপানো হাত চেয়েছে সুখ মেহেদী-রঙ মেশা ব্যথাবিভোর আকাশীচোখ অহনাসুখ শেখে। কীভাবে এই ভুলে যাওয়ার ঘনানো রাত কাটে? দোজখে দিন, বাহানা দূর পস্তানোর থেকে ভালো থাকার পথ খোঁজার বাহারি জিন আসে, তবু এমন ভয় শাণায়... কথাপ্রবণ...লেখে। স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্ত আল-ইমরান সিদ্দিকী
ছায়া উধাও, উত্তীর্ণ, অচিহ্নিত সবকিছুর ছায়ার সাথে গাঢ় হল বসবাস। আদৌ কখনও ছিল কি সেই ফুল, যার পরাগেরা শূন্যে উঠে নাচ করে ফুলের শরীরে ফিরে যেতে চায়? - বিমর্ষতার দিন দীর্ঘ হল। উড়ো আকৃতি’র ছায়া ঘুরছে পাহাড়ে। মৃত সব পাতার সতেজ ছায়াগুলো মটিতে কাঁপছে। যতদূর তাকাতে পারি, তাকিয়ে থাকারই জয়। অন্ধ টানেলের ওপাশে বিরল প্রান্তর, ধোঁয়াধূপ; এপাশে ছায়া, ছায়ায় অর্ধমৃত ফুল... হাসান রোবায়েত সাঁঝবাতি মুজাহিদ আহমদ
শাহবাগেই আছি তোমার চোখে ঘুম নেই...নেই এই ঘুম হাজারো লোকজনের চোখে। তাদের কারও চোখ নুয়ে নেই...হাত মুখ কাঁপছে তো কাঁপছেই শিরায়-উপশিরাও কম্পমান। তারা আমৃত্যুই যেন থেকে যাবে। রক্তে রক্তে ধ্বনি তুলছে খেয়ে না খেয়ে- ‘জয় বাংলা-জয় বাংলা’ ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো’। আলোয় আলোয় আলোর জলসা- সময়ে সময়ে আঁধার কাটছে। উড়ে যাচ্ছে সন্দেহ; সংশয়। অপেক্ষার সূর্য আগামী ভোরেই উঠবে আমরা ছুঁয়ে দেখব...তাই আপাতত গণজাগরণ মঞ্চের খুব কাছাকাছি আছি; শাহবাগেই আছি। তুমিও তো আছ সমারোহের অধীর অপেক্ষায়। শাকিলা তুবা
কৃষ্ণচূড়া বাংলায় হাসে সমুদ্র বা ঢেউ মানে শুধু জল নয় জলের ভেতরেও থাকে গর্জন শোনোনি যেভাবে দিয়েছিল হুংকার বায়ান্নের এক রোদেলা বসন্তসকাল বলেছিল, বাংলাই আমাদের ভাষা। ওরা রুটি চায়নি; বলেনি, কমাও বাসভাড়া মৌলিক যত চাহিদার কথা বলেনি ওরা সব অনাচার নীরবে সয়েছে শুধু মায়ের ভাষা কেড়ে নেবে, এত সাহস? কোন সে তঞ্চক, জালিম বাদশাহ? ওরা সালাম-বরকত, ওরা রফিক-জব্বার প্রয়োজনে ঢেলে দিল খুন একুশের রাজপথে মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা, মনের কথা কেড়ে নেয়া এতই সোজা? ঐ দ্যাখো শিমূল-পলাশ, এ দেশের জল-হাওয়া বাংলাতেই কথা বলে। সৌভিক দা'
শাহবাগ মুভমেন্ট এরকম অগণন ভাঙনের পর একদিন- আকাশের ভেতর থেকে ঝরে পড়ে টুকরো টুকরো নীল কাচ। রঙ বদলে ফেলা একটি গিরগিটি শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসহীনতায় ভুগতে ভুগতে কী ভীষণ একা হয়ে যায় ! জানালার ফাঁক দিয়ে বিকেল গলে পড়ে হলুদ আলোয়, চশমার ভেতরে অশ্রুবিন্দুটি আরও বিমর্ষ হয়। মাসকলাইয়ের উঠোনে একটা ছোট্ট ফিঙে পাখি ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে মাঠ-ঘাট-দিগন্ত পেরোয়... সবুজ পতাকা মেশে ধানক্ষেতে : যার ভেতরে আমরা একটি স্বদেশের জন্ম হতে দেখি! অপরাহ্ণ সুসমিতো
যে কোনও মেয়ে তুমি নও আমি আসলেই কি দেখেছি তোমাকে? নাকি অন্য চন্দ্রমুখী। কোথায় আমাদের দেখা হয়েছিল বলো তো? বালুচরি টলটলে প্রবাহ জলের মতো কোনও প্রবাহের পাশে? নাকি দৃশ্যগুলো আমাদের বানানো। আর যাই হোক না কেন, এটা ভেবে আমাদের অথই আনন্দে ভেসে যাওয়া দরকার যে আমাদের কারিগরের সঙ্গে বোঝাপড়া আছে। প্রস্তরযুগের মতোই আমাদের সবল ছেনি আছে। ভাস্কর বলবে তুমি তাকে? আঙুল গুনে গুনে দিন মাস বলে দেওয়া যাবে। তুমি চলে গেলে, ট্রেনে উঠে হাত নেড়ে নেড়ে। তোমার হাতটা দূর থেকে জাতীয় পতাকার মতো উড্ডীন মনে হয়েছিল। আমি দাঁড়িয়েছিলাম স্টেশনে। ফেরিওলাকে মনে হয় কে যেন বলছিল : আরেকটা সুর ধরো। আমার আর কোথাও যাবার নেই। কিচ্ছু হারাবার নেই। মনে হচ্ছিল তুমি চলে যাচ্ছ "ট্রেন টু পাকিস্তান" ছবির মানুষগুলোর মতো গিজগিজে ট্রেনে। ধর্ম দিয়ে ভাগ করার দেশে। তোমার বিয়ে করবার কথা, সেটাই হল শেষমেষ। আমি তোমার বিয়েতে পকেটে কয়েক টুকরো খুচরো পাথর আর কবিতা নিয়ে গিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল পাথরের নুড়ি দিয়ে বিয়ের আসর গুঁড়িয়ে দিই, যেমন করে প্যালেস্টাইনের শিশু ছুঁড়ে দেয় সশস্ত্র ইজরায়েলি সেনার দিকে অক্ষম আক্রোশে। দেখতে দেখতে চলে গেল দুটো বছর। আমাদের অমল তুমুল জীবন থেকে মাত্র দুটো বছর। ব্যাংকের চেকে যেমন করে লেখে, ২ কোটি টাকা মাত্র। একটা দানবীয় ট্রেন ও একটা আলাদা পাসপোর্ট কত দূরে টেনে নিয়ে যেতে পারে মানুষকে! আমার চতুর্দিক দিয়ে সময় চলে যায় বর্শা নিয়ে, আচমকা মিলেমিশে পিলে কেঁপে ওঠে। আমি কি আজ তবে নবীন অর্জুন? তোমাকে ভাবার কথা আজ আর নয়। তোমাকে লেখা চিঠিগুলো দিয়ে হয়তো কাগজের নৌকা বানিয়ে ছিন্নপত্রের মতো ভাসিয়েছ জলে, কাবেরী নদীতে। আচ্ছা কাবেরী নদী বলে কি কোনও নদী আছে? নাকি চিঠিগুলো নিয়ে ১০০ বছর পর কেউ কাঁচা হলুদের মতো প্রেম ভেবে হেসে জাদুঘরে পাঠাবে? তাহলে ফের কেন লেখা? আমার ভেতরে কি বর্ষার কইমাছের মতো আটকা ঘাই? নাকি ব্যর্থতার ষোলোকলা বাংলাদেশের সবচে' সুন্দর হরিণ আমার করোটিতে স্লো মোশনে দৌড়ে যায়? কী হবে আরেকবার নাহয় দেখি সেই সোনালি হরিণ? আজকাল উত্তরবঙ্গের অভাবের মতো খড়কুটো জমাই। আমার ঠোঁট খুঁটে খুঁটে খড়কুটো জমায়। আরও হয়তো শস্যকণা। অর্থমন্ত্রীর মতো সঞ্চয় শিখেছি। মনে হল আমার সঞ্চয় পেলে তুমি বাধুক পাখির মতো উম দেবে। ডিম ফুটে ছানা। কাপাসতুলোর রঙে। বড়ো আশা বড়ো তৃষা বড়ো আকিঞ্চন তোমারি লাগি বড়ো সুখে বড়ো দুখে বড়ো অনুরাগে রয়েছি জাগি। যায় দিন অনাহারীর মতো। আমাদের আজও জন্ডিসের মতো রাত্রি। ব্লটিং পেপারের মতো দ্য এন্ডলেস রোড। চাঁদ কথা শোনেনি বলে আড়াল হয়েছে তার জ্যোৎস্না নিয়ে, অভিমানে। আমাকে আজ নিশীথ-সূর্যের দেশের কবিতায় পেয়েছে। রাষ্ট্রপতির মতো একা। আমার সমস্ত আকুলতা তোমার কাছে। নিবেদনে অগৌরব নেই। আর নেই বলেই আমি তোমার নাম মুখস্থ করি, মুখস্থ করবার কারণেই ধার করেছি বর্ণমালা। এখন অরণ্য যাচ্ছে নদীর দিকে। অরণ্য, নদীর পাশেই। তাহলে কে অরণ্য কে নদী? পাশাপাশি থাকার জন্যই কি আমাদের একাল থেকে সেকালে যাত্রা? হয়তো। গতি আছে বলেই মানবজন্ম। শুধু তাই? তুমি বলো, বলো। |