কবিয়াল : ভাষা আন্দোলন ও শাহবাগ আন্দোলন : বিশেষ সংখ্যা

ভালো থেকো ফুল, ভালো থেকো হাসি
ভালো থেকো, আমি বড় ভালোবাসি
তোমার ও মুখ, কোমল সজল
ভালো থেকো মনযমুনার জল, ভালো থেকো।

ভালো থেকো ভাব আর ভালোবাসা
রক্তের দামে বেঁচে ওঠা ভাষা
আশায় আশায় বেঁধেছি যে ঘর
পড়শি আমার, আরশিনগর, ভালো থেকো।

সোনার বাংলা, ভালো থেকো তুমি
ভালো থেকো প্রিয় জন্মভূমি
ভালো থেকো ভাই, ভালো থেকো বোন
স্বজনহারানো আত্মীয়জন, ভালো থেকো।

                                                                                                                                                                                                          ছবি : শুভেন্দু সরকার

 ভাষা আন্দোলন ও শাহবাগ আন্দোলনের গান ও ছড়া...

অচিন্ত্য সুরাল
একুশে - শাহবাগ চত্বরে

একুশের দেশ

 
মাসুদ খান
বাংলা ভাষা

(বাংলা ভাষার যে আধুনিক গড়ন, তার গোড়াপত্তন তাঁরই হাতে। একে আরও বিকশিত করে তুলবেন, আরও উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যাবেন ভবিষ্যতের প্রতিভাগণ- এ ছিল তাঁর আশা ও বিশ্বাস। তিনি জানতেন- ভাষা বহতা নদীর মতো। বহমানতা আর বদলে বদলে যাওয়ার মধ্যেই নিহিত এর শক্তি ও সম্ভাবনা।... রবীন্দ্রনাথ, সেই মহোচ্চ প্রতিভার উদ্দেশে নিবেদিত আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস...)

নীল নীলিমার নীল
রৌদ্রঝিলমিল
বটবৃক্ষের ছায়া
জ্যোৎস্নারাতের মায়া
বনের অম্লজান
অভিকর্ষের টান
দলকলসের মৌ
মাঠের সবুজ ঢেউ
চাঁদনি রাতের সুর
বেদনা-মধুর
কালবোশেখির ক্রোধ
কমলা-পাকা রোদ
মেঘের বরাভয়
ঘুঘু-ডাকের লয়
পাখির কলগান
পাগলাঝোরার তান
বৃষ্টিপাতের যতি
ইচ্ছামতীর গতি
নদীর বাঁকা জল
ঢেউয়ের ছলাৎছল
শিশুর চোখের হাসি
সোনা-ধান্যরাশি-
জিনিয়ে ছিনিয়ে সব
গড়ছ অবয়ব
বাংলা এ-ভাষার
আমার বাংলা মা-র।

কাল-শকটে চড়ে
অনেক কাল ধরে
গ্রহান্তর ঘুরে
বহু জন্ম পরে
আসব যখন ফিরে
পুনর্ভবার তীরে
চোখ মেলব ভয়ে
দেখব অবাক হয়ে-
বদলে গেছে খুব
মায়ের, ভাষার রূপ।

ভাবব কিছুক্ষণ-
কেই-বা সেইজন,
কোন-সে কবির তেজে
নতুন সাজে সেজে
জ্বালিয়ে নতুন আশা
এল বাংলাভাষা
সুর-স্বর-ভাব যত
পাল্টে অবিরত!

কোন-সে বর্তিকায়
কোন আলো-আভায়
এমন জ্যোতির্মতী
হলেন সরস্বতী!
কথা ও সুর : মিতুল দত্ত
গান : প্রজন্ম-চত্বরে

তোদের মতোই আমারও এটাই দাবি

তোদের মতোই প্রতিশোধ শুধু ভাবি
তোদের বুকের আগুন লেগেছে পাঁজরের হিমঘরে
তোদের পাশেই দাঁড়িয়েছি আজ প্রজন্ম-চত্বরে...

তোদের কান্না আমার দু'চোখে জমা
তোদের মতোই আমিও করিনি ক্ষমা
মৃত্যুর দাবি আমিও লিখেছি রক্তের অক্ষরে।
তোদের পাশেই দাঁড়িয়েছি আজ প্রজন্ম-চত্বরে...

তোদের হাতে তোদের দিদির হাত
জেগেই কাটছে প্রথম ফাগুনরাত
বুকের মধ্যে পলাশ ফুটছে, সূর্য উঠছে ভোরে
তোদের পাশেই বসন্ত আজ প্রজন্ম-চত্বরে...

বিভাস রায়চৌধুরী
গান : শাহবাগের জন্য গান

ভাষার ভেতরে বিদ্রোহ থাকে অবাধ্য...পিচ্ছিল...
মাথার ভেতরে পাক মারে খালি কান্না-মুখর চিল
কান্নার আছে আউল-বাউল বাঙালির ইতিহাস
মাটি খুঁড়লেই উঠে আসে শত ন্যাংটো মায়ের লাশ
লাশ জানি আজ লাশ নেই, ওগো, পড়ে আছে কিছু হাড়
গাছে গাছে যত শিমূল-পলাশ জুড়ে দেয় চিৎকার
চিৎকার শুনে নতুন বাংলা জমা করে সব রাগ
আগুনে আগুনে রঙিন হয়েছে বিদ্রোহী শাহবাগ
'পাওনা মেটাব...পাওনা মেটাব...' মোম-শিখা বলে যায়...
লক্ষ শহীদ আকাশে বাতাসে রাজি হয় বদলায়
দিন কেটে যায়...রাত কেটে যায়..কবিতাপ্রবণ গানে...
তরুণ তরুণী চুম্বনহীন অভিমানে অভিমানে
চুম্বন তারা জমিয়ে রেখেছে...শেষ দেখবার পর
ভালোবেসে-বেসে পাগল করবে শাহবাগ চত্বর...
সেইদিন যেন সবাই দোয়েল...প্রত্যেকে বুলবুল...
শাহবাগ যেন চিরপ্রেমিকের বসন্ত-ইস্কুল!
দূর থেকে আমি এ গান পাঠাই মুছে ফেলে কাঁটাতার...
এ-গান বিভাস...এ-গান শামীম...এই গান বাংলার...
এই গান বাংলার............

কথা ও সুর : ফিরোজ মাহমুদ খান
গান : প্রথম প্রচ্ছদ

 
একুশ আমার জন্মভূমির প্রথম অহঙ্কার
বাংলাদেশের মহান ধাত্রী একুশের শহীদেরা
একুশ আমার আত্মার গান অব্যয় সম্পদ
রক্তের আল্পনা দিয়ে আঁকা একুশে ফেব্রুয়ারি
বিশ্বের পটে বাংলা ভাষার সুনিকেত প্রচ্ছদ।
 
দোয়েলের শিসে ললিত একুশ মধুর প্রতিধ্বনি
শাপলার হাসি একুশের কাছে হয়ে আছে চির ঋণী
প্রত্যুষে লাল সূর্যের বুকে একুশের আবাহনী
অমর একুশ লাল সবুজের সোনার বাংলাদেশে
ধ্রুপদী চেতনা, কাদা মাটি জলে সত্তায় একাকার।
 
সালাম, রফিক, বরকত এই বাংলার সন্তান
একাত্তরের অযুত যোদ্ধা রেখেছে তাঁদের মান
আমরা কি বলো দিতে পারি এতো রক্তের প্রতিদান
তবু গেয়ে যাই অমর একুশ, একাত্তরের গান
নুর হোসেনের রক্তে শপথ নিই যে পুনর্বার
জীবনে মরণে একুশ আমার আত্মার মল্লার।
 
একুশ আমার জন্মভূমির প্রথম অহঙ্কার
বাংলাদেশের মহান ধাত্রী একুশের শহীদেরা
একুশ আমার আত্মার গান অব্যয় সম্পদ
রক্তের আল্পনা দিয়ে আঁকা একুশে ফেব্রুয়ারি
বিশ্বের পটে বাংলা ভাষার সুনিকেত প্রচ্ছদ।

অভিজিৎ মিষ্টি
গান : রাজীবের জন্য


ওই তো রাজীব ছুটছে রাজীব, ছুটছে রাজীব জোরে
ওই তো রাজীব তোমার জন্য সূর্য আনে ধরে।
ওই তো রাজীব লক্ষ রাজীব শাহবাগের মোড়ে
ওই তো রাজীব শেষ হয় না হাজার বারও মরে।
ওই তো রাজীব মারবে কত, রক্ত আছে লেগে
ওই তো রাজীব উঠল রাজীব ঘরে ঘরে জেগে।
ওই তো রাজীব রক্তমাখা পুবের আকাশ লাল
ওই তো রাজীব বাংলাদেশে এনেছে সকাল।
ওই তো রাজীব গাইছে শোনো, 'হেই সামালো ধান'
এই তো রাজীব, পশ্চিম এই লিখে দিল গান।
ওই তো রাজীব লড়ছে রাজীব, বীরের মতো জান...
এই তো রাজীব তোমায় জানাই 'শহীদ সম্মান'।

বিলোরা চৌধুরী
অগ্নি-অগ্নি খেলা, বইমেলা-বইমেলা


অগ্নি-অগ্নি, ভগ্নী-ভগ্নী
'বই' কে বাঁচাতে পারো না?
সই ছিল 'বই', বকুল পাতানো
পুড়ে ছাই হতে পারে না।

শ্লোগানে-শ্লোগানে প্রজন্ম জাগে
চত্বরে নাই ভয়-ডর
তরুণ বেলুনে উড়ছে বারুদ
রাজাকার কাঁপে থরথর।

ভগ্নী আমার ভগ্নী
তোমার রাখিতে বাঁধছি আমরা
আগাম ফাঁসির লগ্নি।

তুমি সীতা ছিলে, তুমি সাবিত্রী
তোমার তুলনা হয় না
বই পোড়া খুন, কোঁচকানো ছাই
সইতে পারে না, সয় না।

দ্রোহের ফাগুন, নেভালেও লাল
মশালের মতো জ্বলে
ঘৃণার চাপাতি গনগনে করো
এ আগুনে দলে-দলে।
সঙ্গীতা সামন্ত
আমি বাংলার গান গাই


পৃথিবীর আলো চিনতে শেখালো
বাংলামায়ের ভাষা
এই ভাষাতেই মনে জাগে কত
মরমিয়া জিজ্ঞাসা

সুখে ও দুঃখে প্রাণ ভেসে যায়
কোন শিকড়ের টানে
শিকড় বুঝি বা ধন্য হয়েছে
শতপ্রাণ বলিদানে

বাংলাভাষায় ভিড় করে আসে
হাজার স্মৃতির সারি
বারবার তুমি ফিরে ফিরে এসো
একুশে ফেব্রুয়ারি
Make a Free Website with Yola.